1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৭৭ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। সোমবার সকাল ১১টার দিকে বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাঁকে (সাহাবুদ্দিন) রাষ্ট্রপতির পদে শপথ বাক্য পাঠ করান।

সকাল সাড়ে ১০টার পরে তার গুলশানের বাসা থেকে গাড়িবহর বের হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে তার গাড়িবহর বঙ্গভবনে পৌঁছায়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে পৌঁছান এ অনুষ্ঠানে।

প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সামরিক-বেসামরিক আমলারা যোগ দেন শপথ অনুষ্ঠানে।

এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট নাগরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সকাল থেকে বঙ্গভবনে অতিথিরা আসেন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এরপর নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন শপথ নথিতে স্বাক্ষর করেন। শপথ গ্রহণের পরপরই কার্যভার গ্রহণ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিবিদ মো. সাহাবুদ্দিন ২১তম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হলেন। রাষ্ট্রপতি হামিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৪১ দিনসহ টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১০ বছর ৪১ দিন অতিবাহিত করেন।

স্বাধীনতার পর থেকে ১৭ জন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এর মধ্যে মো. আবদুল হামিদই প্রথম ব্যক্তি, যিনি পরপর দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন সাহাবুদ্দিন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ২১ মেয়াদে এই পদে কয়েকজন একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন। সেই হিসাবে সাহাবুদ্দিন সপ্তদশ ব্যক্তি, যিনি দায়িত্ব নিলেন।

শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আপন বিভাগ।

শপথ বাক্য পাঠের পরে আবদুল হামিদের সঙ্গে করমর্দন করেন। এরপর চেয়ার বদলের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়।

আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরে নতুন রাষ্ট্রপতিতে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ অন্যান্যরা অভিনন্দন জানান।

নতুন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ও ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মো. আবদুল হামিদকে দুপুরে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রপতিতে বিদায়ী সম্বর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শপথ অনুষ্ঠানের পর ঢাকার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় তার বাসভবন ‘রাষ্ট্রপতি লজে’ উঠবেন। ২০০০ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে তিন কাঠার এই জমি বরাদ্দ পান তিনি। সেখানে কয়েক বছর পর তোলেন বাড়ি। তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা পাবেন।

মো. সাহাবুদ্দিন মাঠের রাজনীতিবিদ থেকে রাষ্ট্রপতি

মুক্তিযোদ্ধা ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিবিদ মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শরফুদ্দিন আনছারী, মা খায়রুন্নেসা। তার ছোটবেলা কেটেছে পাবনা শহরেই। শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণিতে। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাসের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ আহ্বানে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অনেকবার বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে থাকা মো. সাহাবুদ্দিন মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৭২ সালে পাবনার নগরবাড়ী ঘাট জনসভা এবং পাবনা স্টেডিয়ামের জনসভায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য শুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বুকে জড়িয়ে আশীর্বাদ করেন এবং হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি এবং পাবনা জেলা বাকশালের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসাবে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ছেষট্টির ৬-দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন তিনি। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষাণলে ব্যাপক নির্যাতনের পাশাপাশি তিন বছর জেল খাটেন। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। শুরুর দিকে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন সাহাবুদ্দিন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এর মধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও দায়িত্ব পালন করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারক জীবনের ইতি টানার পর আবারও তিনি আইন পেশায় ফেরেন। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সময় সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

দুদক কমিশনার হিসেবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী, বিনয়ী ও দৃঢ়চেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অতন্দ্র প্রহরী।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। সে সময়ের ‘হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের’ মতো ঘটনার পরবর্তীকালে ক্ষমতায় গিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সাংবাদিকতা পেশায়ও যুক্ত ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। বিচার বিভাগে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৮০ থেকে দুই বছর দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতা করেন। পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য ছিলেন তিনি। রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু এবং নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নিয়মিত কলামও লিখতেন। ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্মসচিব ছিলেন। বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক অ্যাডভাইজারের পাশাপাশি ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..